গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর ঠাঁই সংকুলান হচ্ছে না তাই মেঝেতে, বারান্দায় ও খোলা জায়গায় অনেককে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালটিতে ১৩ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ড রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার ভর্তি ছিলেন ৪৯ জন রোগী।
তীব্র গরম আর খরতাপে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে আসছেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ১৪ জন নতুন রোগী এসেছেন। সোমবার ভর্তি ছিলেন ৩৫ জন। মেঝে, বারান্দা ও ওয়ার্ডের সামনের খোলা জায়গায় ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওয়ার্ডের পাঁচটি রুমের মধ্যে তিনটি ব্যবহার করা হচ্ছে স্টোর হিসেবে। মাত্র দুটিতে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মেঝে, বারান্দায় ও আকাশের নিচে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডটির সামনে-পেছনে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। রয়েছে মশা-মাছির উপদ্রব। ময়লার ট্যাকিং থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ওয়ার্ডের পেছনে রয়েছে বিশাল ময়লার স্তূপ। এর মধ্যেই চলছে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি গ্রামের সুবর্ণা বেগম তার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বাচ্চাকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। পুরো ওয়ার্ডের বারান্দায় একটি মাত্র ফ্যান। তার বাচ্চা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
গোপালগঞ্জ শহরের মৌলভীপাড়া এলাকার নুর-এ-আলম জানান, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন। এই ওয়ার্ডে একটিমাত্র শৌচাগার। সিরিয়াল দিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন তারা।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বিজয়পাশা এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। তাকে নিয়ে সোমবার বেলা ৩টার দিকে এই হাসপাতালে এসেছেন। সিট পাননি। তাই ওয়ার্ডের বাইরে খোলা জায়গায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর বলেন, ভর্তির পর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক তার স্ত্রীকে দেখতে আসেননি। বাইরের দোকান থেকে স্যালাইন ও ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে। নার্সরা শুধু স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন।
লিপি বেগম নামের এক গৃহবধূ ৩ দিন আগে তার শিশুকে নিয়ে আসেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বারান্দার মেঝেতে জায়গা পেয়েছেন। তেমন কোনো ওষুধপত্র দেয়া হচ্ছে না।
হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুব্রত কুমার রায় বলেন, ‘ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সীমিত ব্যবস্থাপনায় আমরা রোগীদের ভালো দেয়ার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, তীব্র তাপদাহের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এ ছাড়া এই সময় নানা প্রকার মৌসুমি ফল পাওয়া যায়। এসব ফল খাওয়ার সময় মাছির মাধ্যমেও ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক বলেন, অনাবৃষ্টি, তাপদাহ ও পৌরসভার লবণাক্ত পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এখানে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য ১৩টি বেড রয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে স্যালাইনের সংকট রয়েছে। তাই ভর্তি রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। তবে খাবার স্যালাইন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।